আলোচ্য বিষয় সমূহঃ পদ্মা সেতুর সংক্ষিপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নোট, মেট্রোরেলের সংক্ষিপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নোট, কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নোট এবং পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল থেকে বিগত বছরের বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সমূহের আলোচনা ।
পদ্মা সেতু হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রাস ও গভীরতম পাইলের সেতু স্থান বিশেষে যার পাইলের গভীরতা প্রায় ১২০ মিটার বা ৩৯০ ফুট। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম সেতু, এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম সড়ক সেতু।
এশিয়ার বৃহত্তম সেতু চীনের- হুংজুং বে সেতু। যার দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার।
পদ্মা সেতুর অফিশিয়াল নাম পদ্মা বহুমুখী সেতু।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মান স্থান-মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত।
পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তের মুন্সিগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলাকে যুক্ত করেছে। এতে রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণের ২২ টি জেলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। এতে দেশের জিডিপি ১.২ % বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার বা ৩.৮২ মাইল এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার বা ৫৯.৬৫ ফুট।
কংক্রিট এবং ইস্পাত এর তৈরি এ দোতলা বহুমুখী পদ্মা সেতুর উপরের তলায় যানবাহন চলাচলের জন্য লেন সংখ্যা ৪ টি আর নিচের তলায় রেল গাড়ি চলাচলের জন্য সিঙ্গেল লাইন ব্রডগেজ রেলপথের ব্যবস্থা আছে। বহুমুখী পদ্মা সেতুতে রেল চলবে ২০২৪ সাল থেকে।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হয় ২০১৬ সালের ৩মে। পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট ঢাকা-যশোর রেল পথের দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার প্রায়। এতে অর্থায়ন করে চীনা G2G চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড। এই রেলপথের ২২ কিলোমিটার দেশের প্রথম ব্যালাস্টবিহীন এলিভেটেড ভায়াডাক্ট রেললাইন।
পদ্মা সেতুর নকশা ও কর্মপরিকল্পনা
পদ্মা বহুমুখী সেতুর সম্পূর্ণ নকশা করে এইসিওএম (AECOM-আমেরিকান কোম্পানি) এর নেতৃত্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ১১ জন পরামর্শকের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল যার (সভাপতি)নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী।
পদ্মা সেতু নির্মাণের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নদীর তলদেশের স্বাভাবিক মাটি না পাওয়া ফলে পাইলিং এর সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রকৌশলীরা নদীর তলদেশে স্ক্রিন গ্রাউন্টটিং পদ্ধতিতে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক ভাবে স্বাভাবিক মাটির বদলে নতুন মাটি তৈরি করে এ সমস্যার দূর করেন।
পদ্মা সেতুর স্প্যান ও পিলার সংখ্যা
পদ্মা সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ৪২ টি এবং স্প্যানের সংখ্যা ৪১ টি। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয় ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের উপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আর শেষ স্প্যানটি বসানো হয় ১০ ডিসেম্বর ২০২০ সালে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের উপর।
সেতুতে স্প্যান বসানোর কাজে ব্যবহৃত হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন নামে খ্যাত তিয়ান-ই
পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট বা প্রায় ১৮ মিটার।
পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়ক্রম
বহুমুখী পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে।
নদী শাসন এবং সেতু মূল সেতু নির্মাণ কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ শে জুন ২০২২ সালে এবং জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২৬ জুন ২০২২ সালে।
রিক্টার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল এই পদ্মা বহুমুখী সেতুর আয়ুষ্কাল ১০০ বছর
চুক্তিবদ্ধ সংস্থাসমূহ
পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণের কার্যাদেশ পায়- চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।
সেতুর দুপাশে নদী শাসনের কাজের দায়িত্ব পায়- চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ
টোল আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা- দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া এক্সপ্রেস কর্পোরেশন এবং চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।
প্রস্তাবিত দ্বিতীয় পদ্মা সেতু
প্রস্তাবিত দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬ কিলোমিটার এবং এর নির্মান স্থান হবে পাটুরিয়া ও গোয়ালানন্দ পয়েন্ট।
মেট্রোরেল
বাংলাদেশের গণপরিববনে বৈদ্যুতিক মেট্রো রেল যুক্ত হয় ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে। মেট্রোরেলের নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (DMTCL)। মেট্রো রেলের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১২৯.৯০১ কিলোমিটার এবং স্টেশন হবে ১০৫টি।
জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন হয় ২৬ জুন ২০১৬ সালে এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে মেট্রো রেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয় ২৯শে আগস্ট ২০২১ সালে।
প্রথম পর্যায়ে মেট্রো রেলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এমআরটি (MRT-Mass Rapid Transit) লাইন-৬ এর এবং এই লাইনেই দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। তাই মেট্রোরেলের অফিসিয়াল নাম ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬।
এম আর টি লাইন ৬’এ স্টেশন সংখ্যা ১৭টি এবং ঢাকার উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য ২১.২৬ কিলোমিটার। তবে আপাতত ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মাত্র ১১.৭৩ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু করা হয় ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে, উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ( প্রথম যাত্রী)। মেট্রোরেল সাধারণ যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ সালে। এ অংশে স্টেশন সংখ্যা ৯টি।
মেট্রোরেলের কোচগুলোর নির্মাতা জাপানের কাওয়াসাকি-মিটসুবিশি কন্সোর্টিয়াম এবং মেট্রোরেল এর যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা হবে ঘন্টায় ৬০ হাজার ও দৈনিক ৫লক্ষ।
কর্ণফুলী টানেল
কর্ণফুলী টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম সুরঙ্গ পথ যার অফিসিয়াল নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে (চীনের এক্সিম ব্যাংক )। কর্ণফুলী টানেলের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কর্ণফুলী টানেলের টিউব ২টি। প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার বাইরের ব্যাস ১২.১২ মিটার ভেতরের ব্যাস ৮০ মিটার। প্রথম টিউবের কাজ সম্পন্ন হয় ১৫ নভেম্বর ২০২২ সালে এবং দ্বিতীয় টিউবের কাজ শেষ হয় ২৬ নভেম্বর ২০২২ সালে। চার লেন বিশিষ্ট এ রাস্তা দৈর্ঘ্যে ৩.৪ কিলোমিটার। যানবাহন চলবে ওয়ান ওয়ে পদ্ধতিতে।
টানেলটি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও আনোয়ারকে সংযুক্ত করবে, যা নির্মিত হয়েছে চীনের সাংহাই শহরের ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলকে কেন্দ্র করে।
কর্ণফুলী টানেলের ফলে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ১৫ কিলোমিটার।
বিগত বছরে বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সমূহ
১. বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প ঢাকার কোন কোন অঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে?
শুধুমাত্র বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সমূহ- ১. বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প ঢাকার কোন কোন অঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে? উত্তরঃ মতিঝিল-উত্তরা ২. ঢাকার মেট্রোরেল ব্যবস্থার অফিসিয়াল নাম- উত্তরঃ ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ৩. ঢাকার প্রস্তাবিত মেট্রোরেল দৈর্ঘ্য কত? উত্তরঃ ২০.১০ কি.মি ৪. মেট্রোরেল এর অর্থায়নের উৎস- উত্তরঃ বাংলাদেশ ও জাপান ৫. মেট্রোরেল এর প্রতি ঘন্টায় যাত্রী ধারণ ক্ষমতা হবে- উত্তরঃ ৬০,০০০ যাত্রী
পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
শুধুমাত্র বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সমূহ- ১. নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু কোন দু’টি জেলা সংযুক্ত করেছে? উত্তরঃ খ. মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর ২. পদ্মা সেতু কার অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে? উত্তরঃ বাংলাদেশ সরকার ৩. পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত? উত্তরঃ ৬.১৫ কিমি ও ১৮.১০ মি ৪. পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য কত মিটার? উত্তরঃ ৬১৫০ মিটার ৫. What is the estimated width (in meter) of the proposed Padma Bridge? / প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর প্রস্থ কত মিটার? (Agrani Bank Ltd. Senior Officer) উত্তরঃ 18 মিটার ৬. প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর লেন সংখ্যা কত? (বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়) উত্তরঃ ৪ টি ৭. পদ্মা সেতুর কোন কোন পিলারের উপর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়েছে? (সিজিডি এফ কার্যালয়ের প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা) উত্তরঃ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ৮. পদ্মা সেতুতে কতটি পিলার আছে? (CAAB এর উচ্চমান সহকারী OGAG কার্যালয়ের অডিটর) উত্তরঃ ৪২ টি ৯. পদ্মা বহুমুখী সেতুর স্প্যানের সংখ্যা কয়টি? ( মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রদর্শক) উত্তরঃ ৪১ টি ১০. পদ্মা সেতু মূল কাঠামো নির্মাণের কার্যাদেশ পায় কোন দেশের কোম্পানি? (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) উত্তরঃ চীন ১১. পদ্মা সেতুতে কোন ধরনের রেল লাইন নির্মিত হবে? উত্তরঃ ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন ১২. পদ্মা সেতুর ভূমিকম্প সহনশীলতার মাত্রা রিখটার স্কেলে কত? (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) উত্তরঃ ৯ ১৩. পদ্মা সেতু বাংলাদেশের কোন প্রান্তে? ( আইসিবি ক্যাশিয়ার) উত্তরঃ দক্ষিণ-পশ্চিম
পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু?
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম সেতু, এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম সড়ক সেতু।