আলোচ্য বিষয় সমূহ- কম্পিউটার ও কম্পিউটারের ইতিহাস, কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ও সীমাবদ্ধতা, কম্পিউটারের প্রকারভেদ, বাংলাদেশে কম্পিউটারের ইতিহাস, বিসিএস পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সমূহ
কম্পিউটার শব্দের আভিধানিক অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কম্পিউটার (Computer) শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কম্পিউট (Compute) থেকে যার অর্থ গণনা বা হিসাব করা, তাই কম্পিউটার (Computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী। কম্পিউটার মূলত গণনকার্যের জন্য তৈরি হয়েছিল। তবে বর্তমানে জটিল ও কঠিন গণনার পাশাপাশি কম্পিউটার মানুষের দৈনন্দিন সকাল কাজেই ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটার অসংখ্য ইলেকট্রনিক বর্তনী ও যান্ত্রীক সরঞ্জামের সমন্বয়ে সংগঠিত, প্রোগ্রাম নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন একটি স্বয়ংক্রিয় অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা ইনপুট হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেটাসমূহ কেন্দ্রিয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ করে আউটপুট হার্ডওয়্যারসমূহের মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করে থাকে।
কম্পিউটারের জনক
কম্পিউটার এর জনক বলা হয় হাওয়ার্ড অ্যাইকনকে কারণ তিনিই সর্বপ্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৮৩৩ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ প্রথম যান্ত্রিক উপায় ব্যবহার করে সংখ্যা ও সারণী গণনা করার মাধ্যমে কম্পিউটারের আধুনিক ভার্সন “Analytical Engine” তৈরি করেন এজন্য চার্লস ব্যাবেজ’কেই আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
কস্পিউটারের ইতিহাস
খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে ব্যাবিলনে বিশ্বের প্রথম গণনা যন্ত্র অ্যাবাকাস আবিস্কৃত হয় বলে ধারণা করা হয়। জাপানে অ্যাবাকাস এর নাম Soroban এবং রাশিয়ায় অ্যাবাকাস এর নাম স্কোসিয়া। গ্রিক, রোমান এবং মিশরীয়রা অ্যাবাকাস ব্যবহার করলেও তাঁদের হিসাব পদ্ধতিতে শূন্যকে সূচনা করার কোন পদ্ধতি ছিল না।ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম শূন্যকে একটি চিহ্ন প্রদান করে হিসাব পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় দশভিত্তিক হিসাব পদ্ধতি শুরু হলেও অঙ্কগুলোর কোন স্থানিক মান ছিল না। ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতবর্ষে দশভিত্তিক হিসাব প্রণালীতে অঙ্কগুলোর স্থানিক মান দেওয়া হয়।
স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার (John Napier) ১৬১৪ সালে লগারিদম (Logarithm) এর উদ্ভাবন করেন। এই আবিস্কার গুণ, ভাগ, বর্গ, বর্গমূল, ঘনমূল নিরুপনের কাজ অনেক সহজ কর দেয়।
১৬৪২ সালে ১৯ বছর বয়স্ক ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লেইজ প্যাসকেল সর্বপ্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। তিনি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারের সাহায্যে যোগ বিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করেন।
১৬৭২ সালে জার্মানি গণিতবিদ গটফ্রাইড ভন লিবনিজ (Gottfried Von. Leibnitz) সিলিন্ডার আকৃতিবিশিষ্ট গিয়ার ব্যবহার করে একটি যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন। এটি বিশ্বের আরো উন্নত প্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর বা ডিজিটাল ক্যালকুলেটর। ‘Stepped Reckoner’ নামে পরিচিত এই হিসাবযন্ত্রটির সাহায্যে পৌনঃপুনিক যোগ, গুণ এবং ভাগ করা যেত।
১৮২০ সালে ফ্রান্সের চার্লস জাভিয়ার টমাস ও ফ্র্যাঙ্ক স্টিফেন বাল্ডউইন লিবনিজের যন্ত্রের অনুরুপ এরিথোমিটার’ নামক যন্ত্র তৈরি করেন। এটি ছিল সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক হস্তচালিত ক্যালকুলেটর।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ ১৮২২ সালে বেল ল্যাবরেটরিতে লগারিদম হিসাবসহ গাণিতিক হিসাবের জন্য প্রথম স্বয়ংক্রিয় ও মেকানিক্যাল ক্যালকুলেটর “ডিফারেন্স ইঞ্জিন” আবিস্কার করেন। ১৮৩৩ সালে তিনি ‘এ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন’ (Analytical Engine) নামক একটি যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং নক্সা করেন। ব্যাবেজের এ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিনের পরিকল্পনায় আধুনিক কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ছিল। এজন্য ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
এ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন কম্পিউটার সিস্টেমে প্রথম বাইনারি (০,১) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং এখানে প্রোগ্রাম ও সংরক্ষনের ব্যবস্থা ছিল। ডা. অগাস্টা ন্যাভলেস পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার। তিনি চার্লস ব্যাবেজ আবিস্কৃত কম্পিউটারের বা ডিফারেন্স মেশিনের জন্য প্রথম প্রোগ্রাম লেখেন (১৮৩৪ -১৮৪৩)।প্রোগ্রামিং ভাষা এ্যাডা তাঁরই নামানুসারে নামকরণ করা হয়।
১৮০১ সালে বস্ত্রশিল্পে নকশা নিয়ন্ত্রণের জন্য হারম্যান হলিরিথ আবিস্কৃত পাঞ্চকার্ড ব্যবহার শুরু হয়। ডঃ হারম্যান হলোরিথ ১৮৮০ সালে চার্লস ব্যাবেজের এনালাইটিক্যাল যন্ত্রের সাথে টেবুলেটর যন্ত্র সংমিশ্রণ করে টেবুলেটিং মেশিন নামে একটি গণনা যন্ত্র আবিস্কার করেন। ১৮৯০ সালে এ যন্ত্রটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এ সাফল্য সরূপ ডঃ হারম্যান নিজেই টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানী নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন যা পরে আইবিএম নামে সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কম্পিউটার কোম্পানী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৩০ সালে নির্মিত Mark-1 কম্পিউটারটি ছিল প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার বা প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাওয়ার্ড এইচ আকেন (Dr. Howard H. Aeiken) এবং আই. বি. এম এর যৌথ প্রচেষ্টার ফসল।
১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেসিলভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধাপক ড. জন মাউসলি এবং তার এক ছাত্র প্রেসপার একার্ট এনিয়াক (ENIAC=Electronic Numerical Integratorand Calculator) নামক একটি গণনা যন্ত্র তৈরি করেন। এটি পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ বা সফল ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার।
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
১) দ্রুত গতি
২) নির্ভুলতা
৩) সূক্ষ্ণতা
৪) বিশ্বাসযোগ্যতা
৫) ক্লান্তিহীনতা
৬) স্মৃতিশক্তি
৭) স্বয়ংক্রিয়তা
৮) বহুমুখিতা
৯) যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত
১০) অসীম জীবনীশক্তি
আধুনিক কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-বৃহৎ স্মৃতির আধার, দ্রুত গতিতে প্রশ্ন সমাধান, ভ্রমশূন্য ফলাফল ইত্যাদি।
কম্পিউটারে কাজের গতি প্রকাশ করা হয় ন্যানোসেকেন্ড দ্বারা। (১ ন্যানো সেকেন্ড = ১ সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগের এক ভাগ)
কম্পিউটার প্রোগ্রাম এর পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ বা একই নির্দেশনা বার বার সম্পন্ন করার প্রক্রিয়াকে লুপিং (Looping) বলে।
কম্পিউটারের সীমাব্ধতা
কস্পিউটার একটি নির্বোধযন্ত্র। কম্পিউটার নিজে বুদ্ধি খাটিয়ে কোন কাজ করতে পারে না, তবে মানুষের তৈরি করে দেওয়া নির্দেশমালা অনুসরন করেই কম্পিউটার সব রকমের কাজ সম্পন্ন করে।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ
কম্পিউটারের গঠন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কম্পিউটার ৩ প্রকার। যথা-
(১) এনালগ কম্পিউটার
(২) ডিজিটাল কম্পিউটার
(৩) হাইব্রিড কম্পিউটার
ডিজিটাল কম্পিউটার আবার ৪ প্রকার। যথা-
সুপার কম্পিউটার
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
মিনি কম্পিউটার
মাইক্রো কম্পিউটার
মাইক্রো কম্পিউটারগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) ডেস্কটপ
২) ল্যাপ্টপ
বাংলাদেশে কম্পিউটারের ইতিহাস (History of Computer in Bangladesh)
১) বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার স্থাপিত হয়- ১৯৪৬ সালে পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকায়। IBM-1620 মডেলের মেইনফ্রেম কম্পিউটার।
২) বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ চালু হয়-১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে
৩) বাংলাদেশে একমাত্র সুপার কম্পিউটার আছে কম্পিউটার কাউন্সিল ল্যাবে যার মডেল নং IBM RS/6000 SP
৪) বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় (পেশাজীবী সংগঠন) – ১৯৮৯ সালে
৫) বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয় (সরাকারি প্রতিষ্ঠন)- ১৯৯০ সালে
৬) বাংলা ভাষায় প্রথম কম্পিউটার বিষয়ক মাসিক পত্রিকা – কম্পিউটার জগৎ (১৯৯১ সালে প্রকাশিত)
৭) বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেট চালু হয়- ১৯৯৬ সালে
8) বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেটভিত্তিক নিউজ এজেন্সি- বিডি নিউজ (BD News)
বিসিএস পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সমূহ
প্রশ্ন নং-১. কম্পিউটার কে আবিস্কার করেন? (২০তম বিসিএস)
ক. উইলিয়াম অটরেড
খ. ব্রেইসি প্যাসকেল
গ. হাওয়ার্ড এইকিন
ঘ. আবাকাস
উত্তরঃ গ
FAQ SECTION
কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার শব্দের আভিধানিক অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কম্পিউটার (Computer) শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কম্পিউট (Compute) থেকে যার অর্থ গণনা বা হিসাব করা, তাই কম্পিউটার (Computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী। কম্পিউটার মূলত গণনকার্যের জন্য তৈরি হয়েছিল। তবে বর্তমানে জটিল ও কঠিন গণনার পাশাপাশি কম্পিউটার মানুষের দৈনন্দিন সকাল কাজেই ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটার অসংখ্য ইলেকট্রনিক বর্তনী ও যান্ত্রীক সরঞ্জামের সমন্বয়ে সংগঠিত, প্রোগ্রাম নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন একটি স্বয়ংক্রিয় অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা ইনপুট হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেটাসমূহ কেন্দ্রিয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ করে আউটপুট হার্ডওয়্যারসমূহের মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করে থাকে।
কম্পিউটারের জনক কে?
কম্পিউটার এর জনক বলা হয় হাওয়ার্ড অ্যাইকনকে কারণ তিনিই সর্বপ্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৮৩৩ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ প্রথম যান্ত্রিক উপায় ব্যবহার করে সংখ্যা ও সারণী গণনা করার মাধ্যমে কম্পিউটারের আধুনিক ভার্সন “Analytical Engine” তৈরি করেন এজন্য চার্লস ব্যাবেজ’কেই আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে?
১৮৩৩ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ প্রথম যান্ত্রিক উপায় ব্যবহার করে সংখ্যা ও সারণী গণনা করার মাধ্যমে কম্পিউটারের আধুনিক ভার্সন “Analytical Engine” তৈরি করেন এজন্য চার্লস ব্যাবেজ’কেই আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়।