আলোচ্য বিষয় সমূহ- বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, বাংলাদেশের সীমানা, বাংলাদেশের আয়তন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত চুক্তি, ছিটমহল, ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্র বিরোধের স্থায়ী নিষ্পত্তি
ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়া মহাদেশের দক্ষিন এশিয়া অংশে। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান-
২০ ডিগ্রী ৩৪’ উত্তর অক্ষরেখা হতে ২৬ ডিগ্রী ৩৮’ অক্ষরেখার মধ্যে এবং
৮৮ ডিগ্রী ০১’ পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা হতে ৯২ ডিগ্রী ৪১’ পূর্ব দ্রাঘিমার রেখার মধ্যে।
বাংলাদেশের উপর তথা মাঝখান দিয়ে কর্কট ক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় কর্কটক্রান্তি রেখা ও ৯০ ডিগ্রী দ্রাঘিমাংশের ছেদ বিন্দু অবস্থিত।
বাংলাদেশ ট্রপিক অব ক্যানসার এর উপর অবস্থিত।
বাংলাদেশের সীমানা
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা :পঞ্চগড়, উপজেলা/থানাঃ তেঁতুলিয়া, স্থান: বাংলাবান্ধা/জায়গীরজোত
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনের জেল: কক্সবাজার, উপজেল: টেকনাফ, স্থান: ছেড়াদ্বীপ/সেন্টমার্টিন।
বাংলাদেশের সর্ব পূর্বের জেলাঃ বান্দরবান, উপজেলঃথানচি, স্থানঃআখান ইঠং.
বাংলাদেশের সর্ব পশ্চিমের জেলা: চাঁপাই নবাবগঞ্জ, উপজেলাঃশিবগঞ্জ, স্থানঃমনাকশা।
বাংলাদেশের সর্বমোট সীমারেখা ৫১৩৮ কি.মি. (বাংলাদেশের স্থলসীমা -৪৪২৭ কি.মি. এবং উপকুলের দৈর্ঘ্য ৭১১ কি.মি.) ।
বাংলাদেশের সাথে দুইটি দেশের সীমানা আছে।
১.ভারত
২.মায়ানমার
বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য ৫ টি। যথা- আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গ। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সীমানা আছে।
বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের সীমান্তবর্তী প্রদেশ ২ টি। যথা- চিন এবং রাখাইন।
বাংলাদেশের উত্তরে-ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশ।
বাংলাদেশের দক্ষিণে-বঙ্গপসাগর,
বাংলাদেশের পূর্বে-ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম প্রদেশ এবং মায়ানমারের চিন ও রাখাইন প্রদেশ।
বাংলাদেশের পশ্চিমে- ভারতের পশ্চিম বঙ্গ প্রদেশ।
বাংলাদেশের মোট সীমান্তবর্তী জেলা ৩২ টি। ভারতের সাথে সীমান্তবর্তী জেল ৩০ টি এবং মায়নমারের সাথে সীমান্তবর্তী জেল ৩ টি( রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার)।
রাঙ্গামাটি জেলার সীমানা ভারত ও মায়ানমার উভয় দেশের সীমানা দ্বারা বেষ্টিত।
নিন্মে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাগুলো নিন্মরুপ-
আসাম রাজ্য সংলগ্ন বাংলাদেশের জেলা ৪টি (কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার)
ত্রিপুরা রাজ্য সংলগ্ন বাংলাদেশের জেলা ৭টি (ফেনী, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, ব্রহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি)
মেঘালয় রাজ্য সংলগ্ন বাংলাদেশের জেলা ৪টি (নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুর)
মিজোরাম রাজ্য সংলগ্ন বাংলাদেশের জেলা ১টি (রাঙ্গামাটি)
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংলগ্ন বাংলাদেশের জেলা বাকি ১৪ টি, অপরদিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের জেলা ৯টি।
বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের সাথে কোন দেশের সীমান্ত সংযোগ নেই। বিভাগ অনুযায়ী সীমান্তবর্তী জেলা –চট্টগ্রাম (৮টি), খুলনা (৬টি), রাজশাহী (৪টি), রংপুর (৬টি), সিলেটন (৪টি), ময়মনসিংহ (৪টি)-ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলাই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী
বাংলাদেশের আয়তন
আয়তনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯০ তম। বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার বা ৫৬,৯৭৭ বর্গমাইল।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা
বাংলাদেশের সাথে সমুদ্রসীমা (Maritime boundary) আছে দুইটি দেশের যথাক্রমে ভারত ও মায়ানমার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা-২০০ নটিক্যাল মাইল এবং রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা -১২ নটিক্যাল মাইল।
ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্র বিরোধের স্থায়ী নিষ্পত্তি
বাংলাদেশে ও মিয়ানামারের মধ্যে সমুদ্র সীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয় ২০১২ সালের ১৪ মার্চ। এ সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয় সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যাল ITLOS(International Tribunal for the law of the Sea) এর মাধ্যমে। I TLOS এর সদর দপ্তর জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত। মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে বাংলাদেশ পেয়েছে ১,১১,৬৩১ বর্গ.কি.মি. জলসীমা।
ভারতের সাথে সমুদ্র বিরোধের স্থায়ী নিষ্পত্তি
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হয় নেদারল্যান্ডেস এ অবস্থিত স্থায়ী সালিশি আদালত PCA(Permanent Court of Arbitration) তে ২০১৪ সালের ৭ জুলাই।
বাংলাদেশ ও ভারত সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির ফলে বাংলাদেশ পায় ১৯,৪৬৭ বর্গ.কি.মি এলাকা। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট সমুদ্র অঞ্চল: ১,১৮,৮১৩ বর্গ কি.মি.। বাংলাদেশের টেরিটোরিয়াল (রাজনৈতিক) সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল এবং উপকুল হতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা (EFZ-Exclusive Economic Zone) ২০০ নটিক্যাল মাইল।
বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত চুক্তি
বাংলাদেশে -ভারত সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৪৭ সালের ১৬ মে ভারতের রাজধানী দিল্লীতে।
চুক্তি স্বাক্ষর করেন-শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধী। চুক্তির বিয়য়বস্তু ছিল- বাংলাদেশ ভারতকে বেড়ুবাড়ী হস্তান্তর করবে বিনিময়ে বাংলাদেশ পাবে তিনবিঘা কড়িডোর
বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহল
বাংলাদেশ ও ভারতের মোট ছিটমহল সংখ্যা ১৬২ টি। ভারতের ভিতরে বাংলাদেশের ছিটমহল ছিল ৫১ টি ( ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে ৪৭ টি এবং জলপাইগুড়িতে ৪টি )।
এবং বাংলাদেশের ভিতরে ভারতের ছিটমহর ছিল ১১১ টি ( লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬ টি, কুড়িগ্রামে ১২ টি এবং নীলফামারীতে ৪টি )।
বাংলাদেশ ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল লোকসভায় পাস হয় ২০১৫ সালের ৭ মে এবং ছিটমহল বিনিময় কার্যকর হয় ২০১৫ সালের ১ আগষ্ট।
*বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের সর্ববৃহৎ ছিটমহল ছিল-”দাশিয়ার ছড়া” যা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত।
*রৌমারি ও বড়াইবাড়ি ছিটমহল ছিল কুড়িগ্রাম জেলায়।
*দহগ্রাম ছিটমহল ছিল লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর তীরে।
*বেরুবাড়ি ছিটমহল ছিল পঞ্চগড় জেলায়।
*পাদুয়া ছিটমহল ছিল সিলেট জেলায়।
বিসিএস পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সমূহ
প্রশ্ন নং ১. বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান কোনটি? (৩৬ তম বিসিএস)
(ক).২২ ডিগ্রী ৩০’ দক্ষিণ অক্ষাংশে
(খ). ৮০ ডিগ্রী ৩১’ থেকে ৪০ ডিগ্রী ৯০’
(গ). ৩৪ ডিগ্রী ৩৮’ উত্তর অক্ষাংশে
(ঘ).৮৮ ডিগ্রী০১’ থেকে ৯২ ডিগ্রী ৪১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে
উত্তরঃ ঘ
প্রশ্ন নং ২. নিম্নলিখিত কোনটির উপর বাংলাদেশ অবস্থিত? (২০তম বিসিএস)
(ক). ট্রপিক অব ক্যাপ্রকন
(খ). ট্রপিক অব ক্যান্সার
(গ). ইকুয়েটর
(ঘ). আর্কটিক সার্কেল
উত্তরঃ খ
প্রশ্ন নং ৩. ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাল্পনিক রেখা বাংলাদেশের উপর দিয়ে গিয়েছে,সেটি হচ্ছে- (১২তম বিসিএস/১০তম বিসিএস)
(ক). মূল মধ্যরেখা
খ). কর্কট ক্রান্তি রেখা
(গ). মকর ক্রান্তি রেখা
(ঘ). আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা
উত্তরঃ খ
প্রশ্ন নং ৪. কর্কটক্রান্তি রেখা (১৬তম বিসিএস)
(ক). বাংলাদেশের উত্তর সীমান্ত দিয়ে গিয়েছে
(খ). বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে গিয়েছে
(গ). বাংলাদেশের মধ্যখান দিয়ে গিয়েছে
(ঘ). বাংলাদেশ হতে অনেক দূরে অবস্থিত
উত্তরঃ গ
প্রশ্ন নং ৫. বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা কোনটি? (২২তম বিসিএস / ১৪তম বিসিএস)
(ক). দিনাজপুর
(খ). ঠাকুরগাঁ
(গ).লালমনিরহাট
(ঘ).পঞ্চগড়
উত্তরঃ ঘ
প্রশ্ন নং ৬. তেঁতুলিয়া কোন জেলায় অবস্থিত? (১৫তম বিসিএস)
(ক). দিনাজপুর
(খ). পঞ্চগড়
(গ).জয়পুরহাট
(ঘ).লালমনিরহাট
উত্তরঃ খ
প্রশ্ন নং ৭. বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত স্থানের নাম-(১৭তম বিসিএস)
(ক). টেকনাফ
(খ). তেঁতুলিয়া
(গ).পঞ্চগড়
(ঘ).বাংলাবান্ধা
উত্তরঃ ঘ
FAQ Section:
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ?
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানঃ (i) ২০ ডিগ্রী ৩৪’ উত্তর অক্ষরেখা হতে ২৬ ডিগ্রী ৩৮’ অক্ষরেখার মধ্যে এবং (ii) ৮৮ ডিগ্রী ০১’ পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা হতে ৯২ ডিগ্রী ৪১’ পূর্ব দ্রাঘিমার রেখার মধ্যে। বাংলাদেশের উপর দিয়ে/মাঝখান দিয়ে কর্কট ক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশের আয়তন কত?
বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ.কি.মি বা ৫৬,৯৭৭ বর্গমাইল এবং আয়তনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯০ তম।
বাংলাদেশের সীমানা কত?
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর তথ্যমতে- বাংলাদেশের সর্বমোট সীমানা ৫১৩৮ কি.মি. (বাংলাদেশের স্থলসীমা -৪৪২৭ কি.মি. এবং উপকুলের দৈর্ঘ্য ৭১১ কি.মি.) । বাংলাদেশ ভারত সীমানা দৈর্ঘ্য -৪১৫৬ কি.মি. বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানা দৈর্ঘ্য -২৭১ কি.মি. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা-২০০ নটিক্যাল মাইল এবং রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা -১২ নটিক্যাল মাইল।
কয়টি দেশের সাথে বাংলাদেশের সীমানা রয়েছে?
বাংলাদেশের সাথে দুইটি দেশের সীমানা আছে। ১.ভারত ২.মায়ানমার
বাংলেদেশের মোট সীমান্তবর্তী জেলা কয়টি?
বাংলেদেশের মোট সীমান্তবর্তী জেলা ৩২ টি। ভারতের সাথে সীমান্তবর্তী জেল ৩০ টি এবং মায়নমারের সাথে সীমান্তবর্তী জেল ৩ টি( রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার)।
বাংলাদেশের কোন বিভাগের সাথে ভারতের কোন সীমান্ত সংযোগ নেই?
বাংলাদেশের ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের সাথে ভারতের কোন সীমান্ত সংযোগ নেই।