আলোচ্য বিষয় সমূহ- শব্দ কি, শব্দের বেগ কি, স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এবং স্বাভাবিক চাপে বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগ, শব্দের প্রতিফলন, প্রতিধ্বনি, শব্দানুভূতির স্থায়িত্বকাল, বাদুরের পথচলার পদ্ধতি, শ্রাব্যতার পাল্লা, কয়েকটি প্রাণীর শ্রাব্যতার সীমা, শব্দেত্তর তরঙ্গ ও শব্দোত্তর তরঙ্গ এবং শব্দোত্তর তরঙ্গের ব্যবহার, শব্দের তীক্ষ্ণতা এবং শব্দ থেকে বিসিএস পরীক্ষায় আসা বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ।
শব্দ এক প্রকার শক্তি, যান্ত্রিক এবং অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ যা আমাদের কানে শ্রবণের অনুভূতি জম্মায়। শব্দ উৎপত্তির কারণ হচ্ছে বস্তুর কম্পন। মাধ্যম ছাড়া শব্দ চলতে পারে না। তাই শব্দ সঞ্চালনের জন্য অবিচ্ছিন্ন স্থিতিস্থাপক মাধ্যম তথা জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।
তরঙ্গঃ যে পর্যবৃত্ত আন্দোলন কোন জড় মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চারিত করে কিন্ত মাধ্যমের কণাগুলোকে সঞ্চারিত করে না তাকে তরঙ্গ বলে। তরঙ্গ দুই প্রকার যথা- ১. অনুপ্রস্থ বা আড় তরঙ্গ এবং ২. অনুদৈর্ঘ্য বা লম্বিক তরঙ্গ
ভ্যাকুয়াম বা শূন্য মাধ্যমে শব্দ কখনোই সঞ্চালিত হতে পারে না তাই চাঁদে শব্দ করলে তা কানে শোনা যায় না, সহজ করে বললে চাঁদে বায়ুমন্ডল নেই তাই চাঁদে শব্দ করলে তা আমাদের কানে শোনা যায় না।
শব্দের বেগ কি
কোন মাধ্যমে শব্দ প্রতি সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে শব্দের বেগ বলে। শব্দের বেগ এর একক মিটার/সেকেন্ড (m/s)
জিড়ো ডিগ্রী সেলসিয়াস (0°C) তাপমাত্রায় এবং স্বাভাবিক চাপে শুস্ক বায়ুতে শব্দের বেগ 332 মিটার/সেকেন্ড (m/s) কিন্তু প্রতি 1 ডিগ্রী সেলসিয়াস (1°C) বা 1কেলভিন (K) তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বাতাসে শব্দের দ্রুতি 0.6 মিটার/সেকেন্ড (m/s) বৃদ্ধি পায়।
শীতকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে আর গ্রীষ্মকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। যেহেতু গ্রীষ্মকালে জলীয় বাষ্পের পরিমান বেশি, তাই শব্দের বেগ শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে কালে বেশি হয়।
বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে শব্দের দ্রুতি বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্প বা আর্দ্রতা বেশি থাকে তাই বর্ষাকলে শব্দ দ্রুততর চলে।
মাধ্যমের ঘনত্ব এবং স্থিতিস্থাপকতার উপর শব্দের গতিবেগ নির্ভর করে। যে মাধ্যমের ঘনত্ব বেশি এবং স্থিতিস্থাপক সে মাধ্যমে শব্দের বেগ তত বেশি তাই কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি কিন্তু বাযবীয় মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে কম। আবার ভ্যাকুয়ামে বা শূন্য মাধ্যমে শব্দের বেগ শূন্য।
অর্থাৎ বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের গতি বেগের ক্রম যথাক্রমে: কঠিন>তরল>বায়বীয়।
লোহার মধ্যে শব্দ বাতাসের চেয়ে 15 গুণ দ্রুত চলে এবং কাঠের মধ্যে শব্দ বাতাসের চেয়ে 12 গুণ দ্রুত চলে।
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এবং স্বাভাবিক চাপে বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগ
স্টিলে শব্দের বেগ- 6000 মিটার/সেকেন্ড (m/s)
লোহায় শব্দের বেগ- 5221 মিটার/সেকেন্ড (m/s)
কাঠে শব্দের বেগ- 3800 মিটার/সেকেন্ড (m/s)
ইটে শব্দের বেগ- 3600 মিটার/সেকেন্ড (m/s)
বিশুদ্ধ পানিতে শব্দের বেগ- 1500 মিটার/সেকেন্ড (m/s)
পানিতে শব্দের বেগ- 1450 মিটার/সেকেন্ড (m/s)
বাতাসে শব্দের বেগ- 332 মিটার/সেকেন্ড (m/s)
শব্দের প্রতিফলন
শব্দ তরঙ্গ চলার পথে যদি তা বাধাগ্রস্থ হয়ে পূর্বের মাধ্যমে ফিরে আসে, তাকে শব্দের প্রতিফলন বলে। শব্দের প্রতিফলনের বাস্তব উদাহরণ হলো প্রতিধ্বনি।
প্রতিধ্বনিঃ কোন উৎস থেকে সৃষ্ট শব্দ যদি দূরবর্তী কোন মাধ্যমে বাধা পেয়ে উৎসের কাছে ফিরে আসে তখন মূল ধ্বনির যে পুরনাবৃত্তি ঘটে তাকে শব্দের প্রতিধ্বনি বলে। প্রতিধ্বনির সাহায্যে কূপোর গভীরতা ও সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করা যায়। ফ্যাদোমিটার যন্ত্র ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা হয়।
প্রতিধ্বনি শোনার জন্য মূলধ্বণি ও প্রতিধ্বনি শোনার মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য 0.1 সেকেন্ড হওয়া প্রয়োজন।
প্রতিধ্বনি শোনার জন্য উৎস ও প্রতিফলকের মধ্যবর্তী ন্যূনতম দ্বরত্ব 16.6 মিটার হওয়া প্রয়োজন।
শব্দানুভূতির স্থায়িত্বকাল
কোন শব্দ শোনার পর এর রেশ ০.১ সেকেন্ড পর্যন্ত আমাদের মস্তিষ্কে থাকে, এই সময়কালকে শব্দানুভূতির স্থায়িত্বকাল বলে। মানুষের শব্দানুভূতির স্থায়িত্বকাল 0.1 সেকেন্ড।
বাদুরের পথচলার পদ্ধতি
বাদুর চোখে দেখতে পায় না। বাদুড় পথ চলার সময় ক্রমাগত বিভিন্ন কম্পাঙ্কের শব্দোত্তর তরঙ্গ সৃষ্টি করে। বাদুড় রাতের বেলা অন্ধকারে চলাচল করে বা চলাচলের সময় দিক নির্ণয় আল্ট্রাসনিক শব্দের মাধ্যমে বা সৃষ্টশব্দের প্রতিধ্বনি শুনে।
শ্রাব্যতার পাল্লা
মানুষের শ্রাব্যতার পাল্লা 20Hz থেকে20000Hz। অর্থাৎ শব্দের কম্পাঙ্ক 20Hz এর কম এবং 20000Hz এর বেশি হলে সেই শব্দ মানুষ শুনতে পায়না।
কয়েকটি প্রাণীর শ্রাব্যতার সীমা
বাদুড়ের শ্রাব্যতার উর্ধ্বসীমা – 100000Hz
মাকড়সার শ্রাব্যতার উর্ধ্বসীমা – 45000Hz
কুকুরের শ্রাব্যতার উর্ধ্বসীমা – 35000Hz
শব্দেত্তর তরঙ্গ ও শব্দোত্তর তরঙ্গ
শব্দেত্তর তরঙ্গ বা ইনফ্রাসনিক বা শ্রুতিপূর্ব তরঙ্গঃ যে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক 20Hz এর চেয়ে কম তাকে শব্দেত্তর তরঙ্গ বলে।
শব্দোত্তর তরঙ্গ বা আল্ট্রাসনিক বা শ্রবণোত্তর তরঙ্গঃ যে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক 20000Hz এর বেশি তাকে শব্দোত্তর তরঙ্গ বলে।
শব্দোত্তর তরঙ্গের ব্যবহার
১. সমুদ্রের গভীরতা, হিমশৈল, ডুবোজাহাজ ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয়।
২. ধাতবপিন্ড বা পাতে সূক্ষ্ণতম ফাঁটল অনুসন্ধান।
৩. পোতশ্রয়ের মুখ থেকে জাহাজকে পথ প্রদর্শন।
৪. সূক্ষ্ণ ইলেকট্রিক যন্ত্রপতি পরিস্কার করা।
৫. ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করেতে।
৬. রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাক্ষেত্রে।
শব্দত্তোর তরঙ্গ তৈরি করার উপায়
কোয়ার্টজ ক্রিস্টাল অসিলেটর এর সাহায্যে শব্দোত্তর তরঙ্গ তেরি করা যায়।
শব্দের তীক্ষ্ণতা
শব্দের তীক্ষ্ণতা নির্ভর করে শব্দ তরঙ্গের বিস্তারের উপর। শব্দের তীক্ষ্ণতা পরিমাপ করা হয় ডেসিবলে (db)। 105 ডেসিবেল শ্রুতি সীমার উপরে মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে।
শব্দের তীব্রতা নির্ণায়ক যন্ত্র
শব্দের তীব্রতার একক Wm-2 শব্দের তীব্রতা নির্ণয়ক যন্ত্রের নাম- অডিওমিটার।
বিসিএস পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন সমূহ
১. শূন্য মাধ্যমে শব্দের বেগ কত? (৩৭তম বিসিএস)
ক. ২৮০ m/s
ক. ০ (শূন্য)
গ. ৩৩২ m/s
ঘ.১১২০ m/s
উত্তরঃ খ
২. কোন মাধ্যমে শব্দের গতি সবচেয়ে কম? (১৪তম,৩৭তম বিসিএস)
ক. শূন্যতায়
খ. কঠিন পদার্থে
গ.তরল পদার্থে
ঘ. বায়বীয় পদার্থে
উত্তরঃ ঘ
৩. কোন শব্দ শোনার কত সেকেন্ড এর রেশ আমাদের মস্তিস্কে থাকে? (২৮তম বিসিএস)
ক. ১ সেকেন্ড
খ. ০.১ সেকেন্ড
গ. ০.০১ সেকেন্ড
ঘ. ০.০০১ সেকেন্ড
উত্তরঃ খ
৪. বাদুড় অন্ধকারে চলাফেরা করে কিভাবে? (২৭তম বিসিএস)
ক. সৃষ্ট শব্দের প্রতিধ্বনি শুনে
খ. অলৌকিকভাবে
গ. তীক্ষ্ণদৃষ্টিস্পন্ন চোখের সাহায্যে
ঘ. ক্রমাগত শব্দ উৎপন্ন করে অবস্থান নির্ণয় করে
উত্তরঃ ক
৫. সমুদ্রের গভীরত মাপা হয় কোন যন্ত্র দিয়ে? (২০তম বিসিএস)
ক. ফ্যাদোমিটার
খ. জাইরোকম্পস
গ. সাবমেরিন
ঘ. এনিওমিটার
উত্তরঃ ক
৬. কোন মাধ্যমে শব্দের গতি সবচেয়ে বেশি? (২৫তম বিসিএস)
ক. বাতাস
খ. পানি
গ. শূন্যতায়
ঘ.লোহা
উত্তরঃ ঘ
৭. লোকভর্তি হল ঘরে শূন্যঘরের চেয়ে ক্ষীণ হয়। কারণ-(২৩ তম বিসিএস)
ক. লোকভর্তি ঘরে মানুষের শোরগোল থাকে
খ. শূন্যঘর নীরব থাকে
গ. শূন্যঘরের শব্দের শোষণ কম হয়
ঘ. শূন্যঘরে শোষণ বেশি হয়।
উত্তরঃ গ
৮. যে শ্রুতিসীমার উপরে মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে তা হচ্ছে-(১২ তম বিসিএস)
ক. ৭৫ ডি.বি
খ. ৯০ ডি.বি
গ. ১০৫ ডি.বি
ঘ. ১২০ ডি.বি
উত্তরঃ গ
৯. শব্দের তীব্রতা নির্ণায়ক যন্ত্র-(২৬ তম বিসিএস)
ক. অডিওমিটার
খ. অ্যামিটার
গ. অডিওফোন
ঘ. অলটিমিটার
উত্তরঃ ক
১০.সমটান সম্পন্ন একটি টানা তারের দৈর্ঘ্য ব্দিগুণ করলে কম্পাঙ্কের কতটা পরিবর্তন হবে? (১৩ তম বিসিএস)
ক. অর্ধেক হবে
খ. দ্বিগুণ হবে
গ. তিনগুণ হবে
ঘ. চারগুণ হবে
উত্তরঃ ক
১১. কিসের মাধ্যমে সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করা যায়? (১৪ তম বিসিএস)
ক. শব্দের প্রতিফলন
খ. শব্দের প্রতিধ্বনি
গ. আলোর প্রতিসরণ
ঘ. আলোর সংকেত
উত্তরঃ খ
১২. চাঁদে শব্দ করলে শোনা যাবে না কেন? (১৬তম বিসিএস)
ক. চাঁদে কোন জীবন নেই তাই
খ. চাঁদে কোন পানি নেই তাই
গ. চাঁদে বায়ুমন্ডল নেই তাই
ঘ. চাঁদের মধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ অপেক্ষা কম তাই
উত্তরঃ গ
১৩. কোন মাধ্যমে শব্দের গতি সবচেয়ে বেশি? (১৩তম বিসিএস)
শব্দ এক প্রকার শক্তি, যান্ত্রিক এবং অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ যা আমাদের কানে শ্রবণের অনুভূতি জম্মায়। শব্দ উৎপত্তির কারণ হচ্ছে বস্তুর কম্পন। মাধ্যম ছাড়া শব্দ চলতে পারে না। তাই শব্দ সঞ্চালনের জন্য অবিচ্ছিন্ন স্থিতিস্থাপক মাধ্যম তথা জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।
বাতাসে বা বায়ুতে শব্দের বেগ কত?
জিড়ো ডিগ্রী সেলসিয়াস (0°C) তাপমাত্রায় এবং স্বাভাবিক চাপে শুস্ক বায়ুতে শব্দের বেগ 332 মিটার/সেকেন্ড (m/s) স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এবং স্বাভাবিক চাপে বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগ স্টিলে শব্দের বেগ- 6000 মিটার/সেকেন্ড (m/s) লোহায় শব্দের বেগ- 5221 মিটার/সেকেন্ড (m/s) কাঠে শব্দের বেগ- 3800 মিটার/সেকেন্ড (m/s) ইটে শব্দের বেগ- 3600 মিটার/সেকেন্ড (m/s) বিশুদ্ধ পানিতে শব্দের বেগ- 1500 মিটার/সেকেন্ড (m/s) পানিতে শব্দের বেগ- 1450 মিটার/সেকেন্ড (m/s) বাতাসে শব্দের বেগ- 332 মিটার/সেকেন্ড (m/s)
প্রতিধ্বনি কাকে বলে?
কোন উৎস থেকে সৃষ্ট শব্দ যদি দূরবর্তী কোন মাধ্যমে বাধা পেয়ে উৎসের কাছে ফিরে আসে তখন মূল ধ্বনির যে পুরনাবৃত্তি ঘটে তাকে শব্দের প্রতিধ্বনি বলে। প্রতিধ্বনির সাহায্যে কূপোর গভীরতা ও সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করা যায়। ফ্যাদোমিটার যন্ত্র ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা হয়।
শূন্য মাধ্যমে শব্দের বেগ কত?
ভ্যাকুয়ামে বা শূন্য মাধ্যমে শব্দের বেগ শূন্য।
অর্থাৎ বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের গতি বেগের ক্রম যথাক্রমে: কঠিন>তরল>বায়বীয়।
কোন মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি?
কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি কিন্তু বাযবীয় মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে কম। আবার ভ্যাকুয়ামে বা শূন্য মাধ্যমে শব্দের বেগ শূন্য। অর্থাৎ বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের গতি বেগের ক্রম যথাক্রমে: কঠিন>তরল>বায়বীয়।